অপরাজিত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত দ্বিতীয় উপন্যাস। ‘প্রবাসী’ মাসিকপত্রে ১৩৩৬ সালের পৌষ সংখ্যা থেকে ১৩৩৮- এর আশ্বিন সংখ্যা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। উপন্যাসের স্ফীতির কারণে দু খণ্ডে বিভক্ত হয়ে প্রথম বের হয়ঃ প্রথম ভাগের প্রকাশকাল মাঘ ১৩৩৮ [এপ্রিল ১৯৩২], দ্বিতীয় ভাগের প্রকাশকাল ফাল্গুন ১৩৩৮ [মে ১৯৩২]। এবারেও প্রকাশক ছিলেন সজনীকান্ত দাস, বের করা হয়েছিল রঞ্জন প্রকাশালয় থেকে এবং দাম ছিল যথাক্রমে দু টাকা চার আনা ও দু টাকা। পরে ‘অপরাজিত’ দু খণ্ডের জায়গায় এক খণ্ডে মুদ্রিত হয়, এখনও তাই হচ্ছে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ উপন্যাসটি উৎসর্গ করেছিলেন ‘মাতৃদেবীকে’।
‘অপরাজিত’ সাময়িকপত্রে মুদ্রণের আগে লেখকের পরিকল্পিত নাম ছিল ‘আলোর সারথি’, কিন্তু ‘প্রবাসী’ তে ছাপানোর সময়েই শিরোনাম পরিবর্তন করে ‘অপরাজিত’ রেখেছিলেন।
‘পথের পাঁচালী’ র অপু-কাহিনীরই সম্প্রসারণ ‘অপরাজিত’। পরে কোন এক সময়ে অপুর সন্তান কাজলকে নিয়ে উপন্যাস রচনার ইচ্ছা তার মনে ছিল। ‘তৃণাঙ্কুর’ দিনলিপিতে তিনি লিখেছেনঃ
“অপুকে জন্ম থেকে ৩৪ বৎসর বয়স পর্যন্ত আমি কলমের ডগায় সৃষ্টি করেচি। তাকে ছাড়তে সত্যিকার বেদনা অনুভব করচি-তবে সে ছিল অনেকখানিই আমার নিজের সঙ্গে জড়ানো, সেইজন্যে বেশি কষ্ট হচ্ছে বিদায় দিতে কাজলকে, লীলাকে, দুর্গাকে, রাণূদি’কে-এরা সত্য সত্যই কল্পনাসৃষ্ট প্রাণী। কোনোদিকে এদের কোনো ভিত্তি নেই এক আমার কল্পনা ছাড়া।“
কিন্তু, কাজলকে নিয়ে কাহিনীসৃষ্টির পূর্বেই বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মারা যান। তার একমাত্র পুত্র তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় অপু-কাহিনীর তৃতীয় খণ্ড হিসেবে বহু পরে ‘কাজল’ রচনা করেন। ‘কাজল কেন লিখব, শিরোনামে একটি রচনা বিভূতিভূষণ মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে ‘কথাসাহিত্য’ পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন এবং ঐ কাগজেই ১৩৫৭-র পৌষ সংখ্যা থেকে ধারাবাহিকভেবে ‘কাজল’ প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল। এ থেকে তার যে অভিপ্রায় ধরা পরে পিতার সেই অতৃপ্ত বাসনা পুত্র চরিতার্থ করার চেষ্টা করেছিলেন, সন্দেহ নেই।